মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, , ১৮ রবিউল সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস আজ, দেশে এখনওে নিখোঁজ ১৫৩

 আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস আজ, দেশে এখনওে নিখোঁজ ১৫৩
ছবি-সংগ্রহীত

আজ আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস।  গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিকভাবে ৩০ আগস্ট দিবসটি পালিত হচ্ছে । এ দিন রাজধানী ঢাকায় গুমের শিকার পরিবার ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা কর্মসূচি পালন করেন।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন করবে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। সংগঠনটির সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম আঁখি সাংবাদিকদের জানান, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো ১৫৩ জনের কোনো খোঁজ জানে না তাদের পরিবার।’ বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১৭ বছরে ৬২৯ জন গুমের শিকার হয়েছেন। একই ধরনের তথ্য দিয়েছে আরেক বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
গত (২৯ আগস্ট) আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সনদে সই করেন। এর আগে ২৭ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের ‘কমিশন’ গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কমিশনকে তদন্ত করে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ফলে এবার দিবসটি বাংলাদেশের জন্য ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্না এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসক গুমের মতো নিষ্ঠুর ও অমানবিক অভিযোগ উত্থাপনের শুরু থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়মিত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দাবি জানিয়ে আসছিল। আসক বিশ্বাস করে, নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
আসকের তথ্যমতে, ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬২৯ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে লাশ উদ্ধার হয়েছে ৭৮ জনের, অপহরণের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৫৯ জনকে এবং পরে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৭৩ জনকে। বাকি ব্যক্তিদের এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আসক মনে করে, গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর এবং এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সমাজে যে ভীতি ও দায়মুক্তির অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, তা থেকে উত্তরণে একটি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আসক সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবি জানাচ্ছে, গুম থেকে সব নাগরিকের সুরক্ষা; গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ;
সব নিখোঁজ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর; দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করুন এবং সুষ্ঠু আইনি বিচারের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ;
গুমের শিকার অধিকাংশ ব্যক্তি আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। গুমের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী বিশেষ করে র‌্যাব, ডিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই ও সিটিটিসির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। শেখ হাসিনা সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের আয়নাঘরে রেখে নির্যাতনের অনেক বিশ্বাসযোগ্য ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার করে গুমসহ সব অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে এবং মানবসেবায় নিয়োজিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক সনদ হিসাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়।