মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, , ১৮ রবিউল সানি ১৪৪৬

অটোনোমাস মারণাস্ত্রের ব্যবহার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অটোনোমাস মারণাস্ত্র ব্যবহার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অটোনোমাস মারণাস্ত্র ব্যবহার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অটোনোমাস

মানবজাতি এখন যুদ্ধের এক নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় উন্নতির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করছে, যেগুলো কোনো মানুষের নির্দেশনা বা সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিপক্ষ দলের সেনাদের চিহ্নিত ও হত্যা করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ইরানসহ অনেক দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের অস্ত্র তৈরির পেছনে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইনির্ভর স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র কিছু ব্যাপারে যুদ্ধক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যেমন- যুদ্ধক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সেনাদের সংশ্লিষ্টতা কমানো যাবে। এতে তাদের জীবন বাঁচবে। যারা এসব অস্ত্রের সমর্থনে কথা বলছেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে- এসব জটিল ও সূক্ষ্ম অস্ত্রের সাহায্যে মনুষ্যসৃষ্ট ত্রুটি ও পক্ষপাতিত্ব এড়ানো সম্ভব হবে। লক্ষ্যমাত্রায় আরো নিখুঁতভাবে আঘাত হানা গেলে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হবে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত বা অটোনোমাস মারণাস্ত্রের নাম লিথ্যাল অটোনোমাস ওয়েপনস সিস্টেম (এলওডব্লিউএস)। ২০২০ সালে তুরস্ক ‘কারগু-২’ নামের একটি পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসিত ড্রোন দিয়ে লিবিয়ায় হামলা চালিয়েছে। এই হামলার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। বর্তমানে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও স্বয়ংক্রিয় ড্রোন বড় ভূমিকা পালন করছে। মস্কো এবং কিয়েভ উভয়ই বিপক্ষ দলের সেনা ও সামরিক সরঞ্জামে হামলা করার জন্য অসংখ্য স্বচালিত ড্রোন ব্যবহার করছে। বিশ্বব্যাপী এখন অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে রোবট ব্যবহারের সম্ভাব্য সুবিধা ও ঝুঁকিগুলো নিয়ে ভাবছে এবং কীভাবে ও কখন এসব অস্ত্রের উৎপাদন এবং ব্যবহার থামানো উচিত, তা অনুধাবন করার চেষ্টা করছে। যদিও দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক নানা বিভক্তির কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আদৌ এ ব্যাপারে কোনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারবে কি না বা ফলপ্রসূ কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
২০১৯ সালে বিশ্বের ১২৬টি দেশ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ঝুঁকি বিবেচনায় জাতিসঙ্ঘের নিযুক্ত একদল বিশেষজ্ঞের অনুমোদিত ১১টি নীতিমালার সাথে একাত্মতা পোষণ করে। এসব নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল- আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এই জাতীয় অস্ত্রের সম্ভাব্য বিকাশের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য হবে। তবে যুদ্ধের সময় এই আইন কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দীহান।
যদি কোনো রোবট যুদ্ধাপরাধ সংঘঠিত করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট রোবটের কমান্ডিং অফিসারকে এ জন্য দায়বদ্ধ করা হবে কি? নাকি তারও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, যারা এসব রোবটকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে? নাকি এসব রোবট যারা তৈরি করেছে, তাদের জবাবদিহি করতে হবে? স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্যাপারে কী নীতিমালা নেয়া উচিত, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে আরো মৌলিক বিভাজন রয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, এমন কোনো নীতিমালা করা উচিত নাকি এ বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে; এ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত অনেক দেশ।
চীন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেছে কিন্তু তাদের বিকাশ বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করে না। চীন মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্রসহ বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সামরিক সরঞ্জামগুলো প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে।
চীনের অভ্যন্তরীণ অস্ত্র শিল্প ব্লোফিশ এ২ ড্রোনসহ এই জাতীয় প্রযুক্তির বিকাশের লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই ড্রোনগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে পারে এবং স্বাধীনভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। দেশটির গোপনীয় ‘৯১২ প্রজেক্ট’-এর লক্ষ্য আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পানির নিচে চলাচলে সক্ষম রোবট তৈরি করা। ভারত এ ধরনের অস্ত্রের প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তবে একই সাথে দেশটি তার নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা বিকাশের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে।


আ১