মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫,

শিরোনাম :
  • যথাযোগ্য মর্যাদায় কুমিল্লা মুক্ত দিবস পালিত কুমিল্লা–৬ আসনে গণসংযোগ ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম যুবকদের হতাশার দিন শেষ  কেউ বেকার থাকবে না— কাজী দ্বীন মোহাম্মদ নাঙ্গলকোটে কৃষক পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে  চুরির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী ফরিদ আমিন গণঅধিকারের এমপি প্রার্থী! খাদ্য মজুদ যা থাকার কথা তার চেয়ে বেশি আছে: কুমিল্লায় খাদ্য উপদেষ্টা রাত পোহালেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন চান্দিনায় দুই সন্তানের জননীকে হত্যার অভিযোগ; স্বামী আটক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে রসায়ন সমিতির সভাপতি আরিফুল, সম্পাদক আকাশ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে রসায়ন সমিতির সভাপতি আরিফুল, সম্পাদক আকাশ জামায়াত প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা
  • মামলা না হলে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবেনা কলেজ প্রশাসন- অধ্যক্ষ

    কলেজ অধ্যক্ষের টালবাহানা, এক বছরেও হয়নি ভিক্টোরিয়া ছাত্র তামিম নির্যাতনের বিচার

    কলেজ অধ্যক্ষের টালবাহানা, এক বছরেও হয়নি ভিক্টোরিয়া ছাত্র তামিম নির্যাতনের বিচার
    ছবি: সংগৃহীত

    ভিক্টোরিয়া প্রতিনিধি।। ২০২৪ সালের ১১ জুলাই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে 'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই আন্দোলকারীদের উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ ১২ জুলাই আয়োজিত বিক্ষোভ শেষে হামলার শিকার হন ডিগ্রি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ও কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য মো. তামিম হোসেন। দেশের ইতিহাসে জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের হামলায় আহত প্রথম শিক্ষার্থী তিনিই।

    তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এই ঘটনায় কলেজ প্রশাসন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল বাশার ভূঁইয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ভিক্টিমের পরিবার মামলা না করলে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে না।" অধ্যক্ষ আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত সাতজনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাদের পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, রিপোর্টটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে পরিবার মামলা না করলে তদন্ত কপি দেওয়া যাবে না। মামলা না হওয়ায় প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। তদন্তে উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল।”

    শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালে তামিম তার মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী তার উপর চড়াও হয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং কলেজের কাজী নজরুল ইসলাম হলে নিয়ে গিয়ে তাকে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে।এসময় তার মাথা, হাত, পা ও চোখসহ বিভিন্ন অংশে আঘাত করা হয়। হামলায় অংশ নেয় হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী শফিউল্লাহ, হাবিব গাজীসহ আরও বেশ কয়েকজন। নির্যাতনের দুই ঘণ্টা পর খবরটি জানতে পারে কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।

     

    তৎকালীন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবু সুফিয়ান রাসেল ও সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনার ছবি ও ভিডিও দেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

     

    একবছর পেরিয়ে গেলেও কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার কোনো কার্যকর তদন্ত প্রকাশ হয়নি। ফলে কলেজজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

    তৎকালীন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবু সুফিয়ান রাসেল আরো জানান, নজরুল হলে ছাত্রলীগের ১৫-২০ জন কর্মীর হামলার শিকার হন তামিম হোসেন। ৯৯৯ এ কল দিলে, খবরটি জানতে পারে কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা উপস্থিত হয়।

    ১২ ও ১৩ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও কলেজ প্রশাসন বা হল কর্তৃপক্ষ কেউ খোঁজ নেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ১৬ জুলাই হলে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ফেলা হয়।

    ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কলেজ প্রশাসন । তামিমের মোবাইল ও মানিব্যাগ আটকে রাখা হয় ১২ আগস্ট পর্যন্ত। অধ্যক্ষ  স্যার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিলেও এক বছরেও প্রকাশ হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

     

    উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “তামিমের ওপর বর্বর হামলার পর কলেজ প্রশাসন কয়েকবার আশ্বাস দিলেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। ৫ আগস্টের পর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। তবুও প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তা দুঃখজনক।”

    বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মনির হোসেন জানান,“আমরা হামলাকারীদের বিচার চেয়ে বারবার কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গেছি। কিন্তু শুধু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাইনি। যা কলেজ প্রশাসনের অদক্ষতার পরিচয় বহন করে। হামলার এক বছরেও কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ”

    তাছাড়া আহত ৩৫৭ জন ছাত্রের সরকারি তালিকায়ও তামিমের নাম নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষের টালবাহানার কারণে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীদের এমআইএস তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি।

    তামিম বলেন, ছাত্রলীগেরর ছেলেরা আমার নখ উপড়ে ফেলে, আমাকে মাথায় আঘাত করে হত্যাচেষ্টা করে। ভিডিও করার কারণে আমার সাথে এমনটা করেছে ছাত্রলীগ। এখন সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। আমি এদের বিচার চাই। জুলাই আহত তালিকা করতে যখন যাই কলেজ কর্তৃপক্ষ, “ একেকদিন একেক অজুহাত দিয়েছে— ‘নেট নেই’, ‘লোক ডিউটিতে’, ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত আমার নামই ওঠেনি। কিছুদিন আগে আবার কাগজপত্র জমা দিয়েছি।

    তামিমের বাবা জানান,“প্রথমে থানায় অভিযোগ করতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতারা বাধা দেয়। পরে গোপনে কান্দিরপাড় ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দিই। এক অফিসার ফোনে কয়েকবার কথা বললেও পরে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। কেমন যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে।”

    তিনি আরো জানান , যখন ঘটনা ঘটে তখন থানায় অভিযোগ করতে চাইলে ছাত্রলীগ বাধা দেয়। পরে গোপনে গিয়ে কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়িতে আমি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।  সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একজন পুলিশ অফিসার কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফোনের মাধ্যমে কয়েকবার কথা হল অভিযোগ অদৃশ্য হয়ে যায়। এছাড়া তখন কলেজ প্রশাসন কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি।  আমি আমার সন্তান নিয়ে এখনো সংখ্যায় আছি। বিভিন্ন দিক থেকে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছে। আমি এই ঘটনার সুস্থ তদন্ত এবং বিচার দাবি করি। ঐসময়ের কলেজ অধ্যক্ষ কোনো সহায়তা করে নি। বর্তমানে কলেজ প্রশাসন তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। একবছর হয়ে গেলো। আমার সন্তানের কি বিচার পাবো নাহ্?

     

    এক বছর পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় প্রশাসনিক ও আইনি কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বরং তালিকা থেকে বাদ পড়ায় কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের   মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।


    add