শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫,

কুবিতে সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ

কুবিতে সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ
ছবি/সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) মব সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর অনুসারী বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত কনসার্টে মার্কেটিং বিভাগ এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষে অংশ নেওয়া সাদেক সরকার ও সাখাওয়াত অরণ্য নামে দুই ছাত্রদল কর্মীকে এক পাশে নিয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। তখন সাংবাদিক চৌধুরী মাছাবিহ্ ও আবু শামা তাকে প্রশ্ন করেন হামলায় অংশ নেওয়া এই ছেলে আপনার কর্মী নাকি? আপনি এখানে তাকে শেল্টার দিচ্ছেন নাকি? তখন সাংবাদিক আবু শামাকে ধাক্কা দেন শুভ। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাফায়েত সজল প্রশ্ন করতে বাধা দেন। একই সঙ্গে শুভর নির্দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন ছাত্রদলের কর্মীরা। ‘সাংবাদিকদের আগে মার’ বলেই ধাক্কাতে ধাক্কাতে মুক্তমঞ্চ থেকে গোলচত্বরের দিকে নিয়ে যান।

 

হামলায় অংশ নেন ছাত্রদলকর্মী ও বাংলা বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল মালেক আকাশ, ইংরেজি বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম জয়, মার্কেটিং-১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাওহিদ রহমান সাকিব, তাজওয়ার তাজসহ ২০-২৫ জন। হামলার শিকার হন সাংবাদিক চৌধুরী মাছাবিহ্ ও আকাশ আল মামুন।

হামলার ভিডিও ফুটেজ নিতে চাইলে চৌধুরী মাছাবিহ্ মোবাইল ফোন ছুঁড়ে মারেন ছাত্রদলকর্মী সাইফুল মালেক আকাশ। সাংবাদিকদের দিকে মারমুখী অভিব্যক্তি নিয়ে ধাক্কা দেন মার্কেটিং ছাত্রদলকর্মী তাওহিদ রহমান সাকিব। প্রতিবেদকের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী চৌধুরী মাছাবিহ্ বলেন, আমি পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে প্রশ্ন করলে ছাত্রদলের সদস্য সচিব শুভ আমাকে ফোনের ভিডিও অফ করতে বলেন এবং তার কর্মী সাইফুল মালেক আকাশ হামলা চলাকালীন আমাকে ধাক্কা দিয়ে মোবাইল টান দিয়ে ফেলে দেন। এতে আমার মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে ভেঙে যায়।

সাংবাদিক আবু শামা জানান, তিনি মোস্তাফিজুর রহমান শুভকে প্রশ্ন করতে গেলে ধাক্কা মারেন। সঙ্গে সঙ্গে তার কর্মীরা হামলা করেন।

তবে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা ও তাদের ওপর হামলার নির্দেশ ও ইন্ধনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ। তিনি বলেন, পেছনে মারামারি হচ্ছিল। আমরা সামনে ছিলাম। এখানে উপস্থিত শিক্ষকরা আমাদের বিষয়টি দেখতে বলেন। যেই ছেলেটি মেরেছিল, তাকে সেখানে আটকে রাখা হয়।

রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে কোন শিক্ষকরা বিষয়টি ছাত্রদলকে সামলাতে বলেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ড. শরীফুল করীম ও ছাত্র পরামর্শক ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুবের কথা জানান শুভ। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে কমিটির আহ্বায়ক ড. শরীফুল করীম জানান, আইনশৃঙ্খলার রক্ষার দায়িত্ব তার না। এসব করার জন্য তিনি কাউকে দায়িত্ব দেননি। তার কাজ ছিল সব বিষয়ে কোঅর্ডিনেট করা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা।

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম এম শরিফুল করিম জানান, সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে সংবাদ সংগ্রহ করা, সেখানে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবে কাম্য না। প্রক্টর আবদুল হাকিমের ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল্লা আল মামুনকে বারবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। পরে কথা হয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জোবায়ের আলম জিলানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নই। এমন কিছু ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। আমরা এমন ঘটনাকে প্রশ্রয় দেই না। বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলবো।